2024-এ সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ 3 টি Easy কৌশল :Kaizen Secrets.

পৃথিবীতে দু ধরনের মানুষ দেখা যায়। একদল মানুষ আছেন , যারা শান্তিতে জীবন কাটাতে চান, কোন একটি ঝুঁকিবিহীন ইনকামের মধ্যে । সেজন্য তারা ইনকামের রাস্তা হিসাবে বেছে নেন কোন সরকারী চাকরি । আরেক ধরনের মানুষ আছেন, যারা সারা জীবন সুখ আছে ,এমন কাজেই আত্মনিয়োগ করেন। এরা হলেন বিজনেসম্যান বা ব্যবসায়ী । ব্যবসায়ীদের মধ্যে আবার দু ধরনের মানুষ আছেন । একদল প্রথাগত পদ্ধতিকে সম্বল করে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে চলেন । আরেক দল তথাকথিত পদ্ধতিকে তোয়াক্কা না করে ,সম্পূর্ণ নতুন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসাটাকে বড় করে তুলতে সমস্ত রকম প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে দেন ।

এই দু ধরনের ব্যবসায়ীরাই কিন্তু নিজেদের ব্যবসার উন্নতি চান । কিন্তু পথ হিসেবে কেউ পুরনো পথ ,কেউ আবার নতুন পথকে অবলম্বন করতে চান। যারা পুরনো পথ অবলম্বন করে চলেন তাদের মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাটা অনেকটাই কম বা বলা যেতে পারে তারা ঝুঁকি নিতে চান না। ফলে এদের উন্নতিও একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে থাকে। অপরপক্ষে যারা ঝুঁকি নিয়ে , যেকোনো নতুন পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে ,নিজেদের ব্যবসাকে উন্নতির চেষ্টা করেন , তারা যে সব সময় সফলতা পান তা কিন্তু নয়, কখনো তারা ব্যর্থতার চরম পরিস্থিতিতে ঢুকে পড়ে, আবার কখনো তাদের উন্নতি দেশ কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপিত হয়।

Kaizen Law : Group Discussion
Kaizen Law : Group Discussion

এই দু ধরনের মানুষ ছাড়াও ,যে সমস্ত মানুষ ব্যবসা করে তারা সকলেই চায় তাদের ব্যবসায় উন্নতি হোক। ব্যবসায় উন্নতি চান না , এমন কোনো ব্যবসায়ী সারা পৃথিবীতে একজনও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় বা খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে ছোট ব্যবসায়ী হোক বা বড় ব্যবসায়ী। এমনকি যে ব্যক্তি সবেমাত্র ব্যবসা শুরু করেছেন, তিনিও চান খুব তাড়াতাড়ি তার ব্যবসায় অসম্ভব সফলতা যেন এসে যায়। যারা নিজেদেরকে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেছেন তারা সব সময় চাইবেন তাদের ব্যবসা যেন প্রভূত লাভের মুখ দেখে এবং ব্যবসায়ের গণ্ডি যেন অনেকটাই বেড়ে যায় ।

সফলতার জন্য বা আমাদের ব্যক্তি উন্নয়নকে বাড়িয়ে তোলার জন্য প্রথমে লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে । এরপর সাধারণ অবস্থান নির্বাচন করে, সময়ের প্রতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভাগের পরিবর্তনের মাধ্যমে , সম্পূর্ণ অগ্রগতি প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকভাবে ,সঠিক পথে ,এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কাইজেন সিক্রেটস হলো কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত উন্নতির প্রক্রিয়ায় গোপন রহস্য। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ ব্যক্তিরা এই ল গুলিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হিসেবে নিজেদের সাফল্যের কাজে বা তাদের প্রতিষ্ঠানের গুণমান এবং সৃজনশীলতা কে আরো দ্রুত বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করছেন।

কিন্তু সঠিক পদ্ধতি না জানা এবং সঠিক ভাবে সেটা প্রয়োগ না করতে পারার কারণে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় । এই ব্যর্থতার পেছনে মূল যেটি কাজ করে সেটি হল, সেই কৌশল প্রয়োগ করার আগে রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট ঠিকমতো না করে নেওয়া। যেন তেন প্রকারেন, যে কোন কৌশল প্রয়োগ করলেই যে ব্যবসার উন্নতি আসে না সেটা কিন্তু ইতিহাস বহুবার দেখেছে।

তবে ঠিকঠাক ভাবে যদি বিভিন্ন থিওরি বা কৌশল প্রয়োগ করা যায় তবে নিশ্চিতভাবেই ব্যবসায় উন্নতি করা সম্ভব । আমরা সকলেই জানি ,একটা ব্যবসার মূল ভিত্তি হল তার product ও সেই প্রোডাক্টের গুণগতমান। আর একটা ভিত্তি হল , সেই প্রোডাক্টের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মানুষজন । যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রোডাক্টের গুণগত মান যেমন বজায় থাকে ।

তেমনি অসংখ্য স্যাটিসফায়েড কাস্টমারের সহানুভূতি ও জড়িয়ে থাকে সেই কোম্পানি ও প্রোডাক্টের সঙ্গে। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন সেই কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট strong হয়। একটা ভালো কোম্পানি সব সময় চেষ্টা করে তার প্রোডাক্টের গুণমান যেন সর্বোত্তম হয় এবং ওই কোম্পানির সঙ্গে যারা যুক্ত সেই সমস্ত মানুষজনের skill এবং Attitude ক্রমাগত উন্নত হয়। সেজন্য তারা নানা রকম অ্যাক্টিভিটিস ও করে থাকেন।

আর একটা ব্যবসা কিভাবে বড় হচ্ছে বা কিভাবে সেই ব্যবসাটা সফলতা লাভ করছে সেটা জানতে হলে ,আমাদের অবশ্যই সেই সফল ব্যবসায়ী সঙ্গে কথা বলতে হবে । জানতে হবে তিনি কিভাবে সেই সফলতা পাচ্ছেন এবং সেই সফলতাকে maintain করছেন । সফলতার যে রাস্তার কথা তারা বলবেন ,সেটা যদি ঠিকঠাক ক্ষেত্রে, ঠিকঠাক ভাবে প্রয়োগ করা যায় , তাহলে সাফল্য নিশ্চিত। তবে এটা কিন্তু কোন ম্যাজিক নয় বা একদিনের প্রসেস নয়। সফলতা পাওয়া এবং সেই সফলতা দিনের পর দিন মেইনটেইন করা কিন্তু একটা ব্যবসার Heart Line বা life time process .

Business Success
Business Success

আমরা যদি ব্যবসায়ী উন্নতি এবং অনুন্নতির গ্রাফ এনালাইসিস করি তাহলে আমরা দেখতে পাবো অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার লাভজনক জায়গায় পৌঁছে গেছেন কিন্তু সেই বিজনেসের ডেভেলপমেন্ট সেই ভাবে তিনি কিন্তু করতে পারছেন না। এই যে সমস্যার জায়গা এটা কিন্তু অনেক বড় বড় ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই জায়গা থেকে কিভাবে বেরোনো যায় বা কিভাবে বিজনেস কে আরো ডেভলপ করা যায় সেটাই কিন্তু Kaizen Law-এর secret. সেই জন্য আমাদের Kaizen Law সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন এবং তার সঠিক প্রয়োগও প্রয়োজন। না হলে আমাদের ব্যবসা হয়তো চলবে কিন্তু আটকে যাবে বারে বারে। চলুন দেখা যাক Kaizen Law কি জিনিস।

Kaizen কী এবং কেন ?

Kaizen শব্দটি উৎপত্তিস্থল হল জাপান। অর্থাৎ এটি একটি জাপানি শব্দ। জাপানের যে ব্যবসার দর্শন আছে সেখানেই কিন্তু এই Kaizen শব্দটির দেখা পাওয়া যায়। kai এবং Zen এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে Kaizen শব্দটি ।Kai শব্দের অর্থ ‘উন্নতি ’ এবং zen শব্দের অর্থ ‘ক্রমবর্ধমান’। একসাথে Kaizen শব্দের অর্থ হল নিরবচ্ছিন্ন উন্নতি বা ক্রমবর্ধমান উন্নতি। যেখানে উন্নয়নের একটা ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। বিফলতা আসলেও সেভাবে ভেঙে পড়তে দেবেনা মূল ব্যবসাকে।

সেজন্য Kaizen Law কে ব্যবসার জীবনকাঠি ও আমরা বলতে পারি। তাহলে একটা কথা মনে হতেই পারে এই Kaizen Law কি কেবলমাত্র ব্যবসার জন্য ? না বন্ধু সেটা কিন্তু একেবারেই নয় , kaizen Lawর গ্রহণযোগ্যতা আরো বড় আকারের। এটা শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত হয় না ,ব্যবসা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্মপদ্ধতি , তাদের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এমনকি ব্যক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আমরা এই Kaizen Law কে কাজে লাগাতে পারি। সে জন্য প্রথমে আমাদের প্রয়োজনটাকে ঠিকমতো বুঝতে হবে এবং তারপর সঠিকভাবে সেটার প্রয়োগ করতে হবে।

Kaizen Law For All
Kaizen Law For All

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও সারা বিশ্বে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল বা ছাপ ফেলে ছিল। ভেঙে পড়েছিল অর্থনৈতিক কাঠামো। পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোও কিন্তু এর প্রভাব থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারেনি। তাদের মধ্যে জাপানও অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অন্যান্য দেশের মতো জাপানের অর্থনীতি ও ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে। কিন্তু জাপান তাতে ভেঙে না পড়ে আস্তে আস্তে আবার নিজেদেরকে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। এমনকি বিশ্বের অগ্রণী অগ্রগামী দেশ আমেরিকার থেকেও কখনো কখনো তাদের উন্নয়ন অধিক মাত্রায় এগিয়ে গেছে।

সারা বিশ্বের মানুষ আশ্চর্য হয়ে গেল জাপানের এই দ্রুত উন্নতিতে। জাপানের কাছে বিশ্বের মানুষের এই আশা প্রত্যাশিত। বিশ্বের মানুষ জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে, জাপান কি এমন পদ্ধতি প্রয়োগ করছে !যেখানে এত দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব ! এমনকি আমেরিকাও পিছনে পড়ে যাচ্ছে । বিশ্বের তাবড় অর্থনীতিবিদ ,গবেষক নেমে পড়লেন এই উন্নতির গোপন রহস্যের সন্ধানে। দেখা গেল, জাপানের এই উন্নতির পিছনে কাজ করছে kaizen নামক একটা সিক্রেট Law. সেই সময় মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতি কে বাঁচাতে এবং দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমেরিকার পাশাপাশি সারা বিশ্বে এই kaizen Law এর প্রয়োগ ভীষণভাবে বেড়ে গেল। জনপ্রিয় হয়ে উঠলো এই kaizen Law.

‘Kaizen: the Key to Japan’s Competitive Success’
‘Kaizen: the Key to Japan’s Competitive Success’

kaizen Law কে কে প্রথম মানুষের সামনে আনেন মাসাকি ইমাই ( Masaaki Imai) নামক একজন অর্থনীতিবিদ।Masaaki Imai একজন অর্গানাইজেশনাল থিওরিস্ট এবং ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টেন্ট।kaizen Law উপর তিনি রচনা করেন ‘Kaizen: the Key to Japan’s Competitive Success’।তখন থেকেই জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই মূলনীতির প্রয়োগ করে আসছে। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন অর্গানাইজেসান ও এই নীতি সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন।বর্তমান সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই নীতি ব্যবহার করে প্রভূত উন্নতি লাভ করছে।

Masaaki Imai : Father of Kaizen Law
Masaaki Imai : Father of Kaizen Law

Kaizen-Law কিভাবে কাজ করে ?

ব্যবসার জন্য আমাদের দেশে ছোট বড় নানা রকমের প্রতিষ্ঠান আছে। তারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা বিভিন্ন সার্ভিস নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছেও যাচ্ছে। সেইসব ব্যবসায়ী উন্নতি কেমন আছে? অবনতী-ই বা কেমন আছে ! উত্থান যেমন আছে পতন যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। তবে সে সব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দিনরাত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা সফল ও হচ্ছেন। এরকম ক্ষেত্রে আমরা Kaizen Law-এর প্রয়োগ টা সহজ ভাবে বুঝে নিতে পারি!

ছোট বড় যেরকম কোম্পানি হোক না কেন সেই প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্টভাবে একজন মালিক থাকবেন এবং সেই মালিকের অধীনস্থ সেই কোম্পানির একজন ম্যানেজার ও থাকবে। তাদের কর্মধারা অনুসারে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা ও তারা লাভ করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে কাজের পদ্ধতি , ব্যবসায় পদ্ধতি , দীর্ঘদিন ধরে মূলত একই রকম ভাবে চলতে থাকে। কোম্পানি গতানুগতভাবে তাদের প্রোডাক্ট তৈরি করছে বা তাদের সার্ভিস মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু কোম্পানির ডেভেলপমেন্ট তেমনভাবে কিন্তু অনেক সময় চোখে পড়ে না বা কোম্পানির মালিক বুঝতে পারছেন না কোম্পানির একচুয়াল ডেভেলপমেন্ট কতটা হচ্ছে। বছরের পর বছর যেন বাধা ধরা গতে চলা একই কর্মপদ্ধতি।Business Success সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন ও পড়ুন ।

Kaizen ; success Umbrella
Kaizen ; success Umbrella

কিন্তু কোন কোম্পানি আরো বড় হোক, তাদের ইনকাম আরো বাড়ুক, তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ছড়িয়ে পড়ুক দেশ থেকে দেশান্তরে এটা সমস্ত কোম্পানির মালিকই চাইবেন। সেজন্য তিনি কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে আরো উন্নতি করবেন যাতে তারা তাদের কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর মধ্যে মানুষের সমস্যা সমাধানের বিশেষ গুণকে আরোপ করবেন । মূলত তাদের প্রোডাক্ট এর মধ্যে আনবেন বৈচিত্র্য যাতে মানুষ সহজেই সেই প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

যখনই সেই প্রোডাক্টের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়ে যাবে, সমস্যা সমাধানের বার্তা থাকবে ,স্বাভাবিকভাবেই তখন উৎপাদন বৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে হবে। অতিরিক্ত উৎপাদন ওই কোম্পানিকে অতিরিক্ত মুনাফার দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এই উৎপাদন বৃদ্ধি বা বা গ্রাহক বৃদ্ধি খুব সহজ একটা ব্যাপার নয়। এটার জন্য প্রয়োজন হয় একটা long time রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, যেটা করতে পারে একটা ম্যাচিওর টিম ওয়ার্ক। যেটা কিন্তু সকলের কাছে থাকে না।

তাহলে কি বিজনেস ডেভেলপমেন্ট খুব কঠিন কাজ ? তাহলে কি ব্যবসা সারাজীবন একই জায়গা থেকে যাবে ? বাড়বে না একটুও ?

হ্যাঁ, অবশ্যই বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সম্ভব। তবে এটা কখনোই ম্যাজিকের মত, এক লহমায় বা রাতারাতি কোন ব্যবসা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় বা কেউই তা করতে পারবেন না। কিন্তু কোন কোম্পানির মালিক বা কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট যদি কোম্পানির খুবই খুঁটিনাটি , ছোটছোট ভুল-ভ্রান্তি, ছোটছোট বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেন, ছোটখাট সমস্যাগুলোকে খুঁজে বের করে, সেগুলিকে ফেলে না রেখে ,সেগুলোর সমধান করেনএবং সেই সাথে আরো নতুন নতুন গবেষণামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবংউন্নতি করার চেষ্টা করেন, তাহলেই কিন্তু আস্তে আস্তে কোম্পানির সাফল্য আসবে।

সহজ কথায় বলতে গেলে, রাতারাতি সফল হওয়ার চিন্তা না করে বরং আস্তে ধীরে উন্নতি করার মাধ্যমেই সাফল্য অর্জন সম্ভব।এটাই Kaizen-Law-এর মূলকথা । Kaizen-Law কিভাবে কাজ করে,? কেমন ভাবে কাজ করে বা তার রেজাল্ট ,সেটা বর্তমানকালে জাপানের ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ের উন্নতির দিক খেয়াল করলেই সকলের নজরে পড়বে।এক কথায় Kaizen-Law যে কাজ করে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হল জাপান এবং তার অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

Problems // Kaizen Law //Solution
Problems // Kaizen Law // Solution

এতক্ষণ আমরা Kaizen-Law সম্পর্কে একটা ওভারঅল আইডিয়া পেয়ে গেছি। বলা যেতে পারে ,এটাই হল Kaizen-Law এর মূল কথা। তবে এটুকু জানলে Kaizen-Law এর বিষয়ে সম্পূর্ণ জানা হয় না। জানা হয় কিছুটা মাত্র। তবে সম্পূর্ণভাবে এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হলে বিস্তারিতভাবে আমাদের ঢুকতে হবে Kaizen-Law এর অন্দরমহলে।

কাইজেনের প্রয়োগ-পদ্ধতিকে দুটি অংশে বা চক্রে ভাগ করা হয়। যাদের কে বলা হয়

এই দুটি চক্রের সম্মিলিত প্রয়োগে Kaizen-Law সম্পূর্ণতা লাভ করে। যেটা শেষ পর্যন্ত যেকোন বিজনেস বা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির কাজকেই ত্বরান্বিত করে থাকে।

কাইজেনচক্র – ১: ক্রমাগত উন্নয়ন

Kaizen-Law-এর অন্তর্গত কাইজেনচক্র – ১ হল কোন business বা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের প্রথম ধাপ।

এই পদ্ধতিতে ব্যবসার ছোট ছোট ত্রুটি গুলো প্রথমে খুঁজে বার করতে হয় এবং সেগুলোর সুষ্ঠ ও নিয়ম নিষ্ঠ সমাধানের মাধ্যমে যেকোনো ব্যবসার ক্রমাগত উন্নয়নের পথকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। এই চক্রকে সাতটি পদক্ষেপ বা ধাপে ভাগ করা যায়। এই সাতটি ধাপকে সরল সরলভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। এই স্টেপ গুলি যদি আমরা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে Kaizen-Law বিষয়টি জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

চলুন দেখা যাক এই বিষয়টির গভীরে ঢুকে।

Kaizen : Continuous Improvement Process
Kaizen : Continuous Improvement Process

এই পদ্ধতির একদম প্রথম ধাপে যেটা করতে হবে, বা যেটা করা উচিত সেটা হল,

কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে কি কি সমস্যা আছে, সেগুলো প্রথমে খুঁজে বার করে, সেগুলোর একটা লিস্ট বানাতে হবে, যে সমস্যাগুলো ওই কোম্পানিকে এগোতে দিচ্ছে না বা এগুনোর ক্ষেত্রে নিরন্তন বাধার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এই ত্রুটি হতে পারে সেই কোম্পানির বা বিজনেসের একদম উপরে লেবেলের অর্থাৎ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে বা সেই কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের গঠনগত বিষয়ের । এই কাজটি করতে হবে খুবই কৌশলে ও সন্তর্পণে।

যাতে কোম্পানির সাথে যুক্ত মানুষের কখনোই মনে না হয় , তাদের কারণেই কোম্পানির উন্নতি বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। এতে তাদের আত্মসম্মানে আঘাত লাগতে পারে। সেজন্য খুবই সুচারুভাবে সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা গুলির সমাধান সূত্র বার করতে হবে। এবং সমাধান সূত্র হিসেবে যতগুলি পথ বা পদ্ধতি পাওয়া যাবে সেগুলোর ভিতর থেকে প্রয়োগগতভাবে সরল পদ্ধতি গুলোকে সর্বপ্রথমে প্রয়োগ করতে হবে। যা ব্যবসার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে উন্নত করবে। এতে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলিও নিজের প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে মানসিক শক্তি ও শান্তি ফিরে পাবেন।

কিন্তু যদি দেখা যায় এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না বা বিজনেস অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে তাহলে আবার এই পদ্ধতির পুনঃ বিবেচনা করতে হবে। বা বলা যেতে পারে আবার প্রথম থেকে ভুলত্রুটির সুলুক সন্ধান করে আলোচনার মাধ্যমে সেটার প্রয়োগ করে সমাধান সূত্র বার করতে হবে। এক্ষেত্রে হতাশ হলে চলবে না বা হত মনোরথ হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না। এই পদ্ধতি চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সফলতা হস্তগত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে বিজনেস সাফল্যের মূল কথা হলো, হাল না ছেড়ে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

কাইজেনচক্র – ২: পিডিসিএ

কাইজেনচক্র – ২ হল একটি বিকল্প চক্র বা পদ্ধতি যাকে বলা হয় পিডিসিএ সাইকেল (PDCA cycle).

PDCA হচ্ছে

এই চক্রটিও প্রথম চক্রের মতোই, তবে এখানে ধাপ চারটি। একে সিউহার্ট চক্রও (Shewhart cycle) বলা হয়।

PDCA Cycle :Kaizen Law
PDCA Cycle :Kaizen Law

এই পদ্ধতিতে কোন বিজনেসের একদম ভিতরে ঢুকে তার ছোট ছোট সমস্যাগুলোকে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সেগুলো সমাধানের একটা সুষ্ঠ প্ল্যান বা পরিকল্পনা করা হয়।

প্রথম ধাপে যে পরিকল্পনা করা হলো সেই পরিকল্পনার একটা বাস্তব বা প্রয়োগের দিক হল এই দ্বিতীয় ধাপ।

এই ধাপে আমরা দেখব কিভাবে আমাদের পরিকল্পনা কে প্রয়োগ করার ফলে লাভবান হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এবং প্রাপ্ত ফলাফল কেউ বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। অর্থাৎ চেক করে দেখে নিতে হবে আমরা যে নিয়মকানুন ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োগ করলাম সেটার ফলাফল। যেটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

এই পর্বে, যদি দেখা যায় আমাদের প্রয়োগকৃত নিয়ম কানুনের ফলে বিজনেসের ডেভেলপমেন্ট হয়েছে তাহলে ভালো কিন্তু যদি তার উল্টো হয় সেক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনার বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করতে হবে, প্রয়োজন হলে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব থাকা চলবে না।

বিজনেস সাফল্যের জন্য Kaizen-Law র প্রথম law এবং দ্বিতীয় law জানলেই কিন্তু হবে না। এই দুটি law-এর পরিপূরক হিসেবে যে বিষয়টি Masaaki Imai আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন সেটি হল কাইজেন ফ্রেমওয়ার্ক। এটিও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠান বা বিজনেসের ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে। চলুন এই বিষয়টাও একটু বুঝে নেওয়া যাক।

কাইজেন  ফ্রেমওয়ার্ক

কাইজেনের law-এর ফ্রেমওয়ার্কগুলোকে একত্রে ‘Kaizen 5’s Framework’ নামে অভিহিত করা হয়। এই ফ্রেমওয়ার্কগুলো কিন্তু একটু জটিল পদ্ধতি। আগের দুটি লয়ের মত অতটা সহজ নয়। তবে আলোচনা আর বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনেক কঠিন জিনিসও ক্রমে একটা সহজ সরল পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয় । এটিও তার বিকল্প নয়।

Kaizen-এর 5S Frame Work
Kaizen-এর 5S Frame Work

১) সেইরি (Seiri):

জাপানি সেইরি শব্দের অর্থ Sorting বা বাছাই করা। অর্থাৎ কোম্পানির অগ্রগতির পথে যে সব সমস্যাগুলি বাধার সৃষ্টি করছে সেগুলোকে সর্ব প্রথমে খুঁজে নিয়ে লিপিবদ্ধ করে তার ভেতর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা গুলোকে বাছাই করতে হবে।দেখা যায়, কোম্পানির স্টাফরা কাজ ছাড়াও কিছু অকাজের কারণে নিজেদের কর্তব্যের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। হতে পারে এটি ফোনকল কিংবা কোনো পারিবারিক বা মানসিক চাপের কারণে। কাজেই এ জাতীয় অকাজ বা সমস্যাগুলো প্রথমে বাছাই করতে হবে এবং কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে বা প্রয়োজনে নিয়মের মাধ্যমে সেগুলো কে বর্জন করার প্রচেষ্টা নিতে হবে। যদি অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড থেকে তাদেরকে বিরত করা যায়, তাহলে তারা নিজেদের কাজে আরো বেশি মনোযোগী হতে পারবে। আর কোম্পানির স্টাফেরা যদি মনোযোগী হয়ে তাদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যায় ,তাহলে কোম্পানির উন্নয়ন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ একজন সুশিক্ষিত সুসংগঠিত স্টাফই পারে একটা কোম্পানির প্রকৃত উন্নয়নের শরিক হতে।

২) সেইটোন (Seiton):

সেইটোন শব্দের অর্থ ‘Set in order’ অর্থাৎ আমরা যে সমস্ত সমস্যা বা ভুল ত্রুটি গুলো লিপিবদ্ধ করলাম সেগুলোর গুরুত্ব অনুযায়ী যথাযথ ক্রমবিন্যাস করে নিতে হবে। কিভাবে সেটি করা সম্ভব , চলুন এই বিষয়টি আমরা একটা উদাহরণের মাধ্যমে বুঝে নিই, সেই উদাহরণ হিসেবে আমরা কোনো Computer কোম্পানিকে নিতে পারি।

Computer কোম্পানিতে একটি নির্দিষ্ট Room-এ একটি সম্পূর্ণ Computer কখনোই তৈরি হয় না বা কখনোই তৈরি করা সম্ভব নয়। কারণএকই ব্যক্তি সবধরনের কাজ করে না বা একই ব্যক্তির পক্ষে সমস্ত বিষয়ে পারদর্শী হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। সেজন্য এই ধরনের টেকনিক্যাল কাজগুলোকে করার জন্য এর কর্মক্ষেত্রকে কয়েকটি সেকশনে বিভাজিত করা হয় এবং সেই অনুযায়ী প্রত্যেকটি বিষয়ে অভিজ্ঞ বা দক্ষ লোক-জন ও রাখা হয়।

যেমন- একটি সেকশনে মাদারবোর্ড সংযুক্ত করা হয়।

দ্বিতীয় সেকশনে এর সাথে যুক্ত করা হয় স্ক্রিন।

এরপর CPU, Key Board ইত্যাদি যুক্ত করা হয়।

একদম শেষে থাকে শেষে ফাইনাল চেকিং। যার মাধ্যমে একটি Computer এর সার্বিক গুনাগুন বিচার বিশ্লেষণ করে তারপরেই সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য মার্কেটে ছাড়া হয়।

উপরোক্ত কাজগুলি করার জন্য প্রত্যেকটি সেকশনেই সুদক্ষ টেকনিশিয়ান রাখতে হবে। যে মানুষ যে বিষয়ে দক্ষ তাকে সেই সেকশনে রাখতে হবে। একটি বিষয়ের দক্ষ কর্মী কখনোই অন্য বিষয়ে ব্যাপারে অযথা নাক গলাবে না বা সেই কাজ করার চেষ্টা করবে না এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্টকে অবশ্যই একটু নজর রাখতে হবে। এই যে পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটা সম্পূর্ণ কাজ একটা সুষ্ঠ সাইকেলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হবে ,সেটাই হলো সেইটোন বা ওয়ার্ক ইন অর্ডার।

৩) সেইসো (Seiso):

মানুষের জীবনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা একটা বিশেষ মাত্রা গঠন করে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা শুধুমাত্র ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গণ্ডি আমাদের কর্মক্ষেত্রেও সমানভাবে জরুরী। আমরা অনেক সময় আমাদের পারিবারিক বা শারীরিক পরিচ্ছন্নতাকে যতটা গুরুত্ব দিই, আমাদের কর্মক্ষেত্র বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ততটা কিন্তু গুরুত্ব দেই না। তার কারণ সেই প্রতিষ্ঠানকে আমরা সেই ভাবে ভালবাসতে পারি না বা নিজেদের ভাবতে পারি না।

এই কাজের জন্য কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট কে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে ,যাতে কোম্পানির প্রতিটি মানুষ সেই কোম্পানিকে তার নিজের বাড়ি ঘর ভাবতে পারে ,নিজের প্রতিষ্ঠান ভাবতে পারে। একমাত্র তখনই সেই মানুষটা নিজের কর্মক্ষেত্র কে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবে।

সেজন্য অনেক সময় দেখা যায় ,অনেক কোম্পানি তাদের স্টাফদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ,পোশাক আশাক, ব্যবহার এবং কর্ম ক্ষেত্রে নিজের টেবিল ম্যানেজমেন্ট কে বিভিন্ন রকম মান্থলি প্রাইজের মাধ্যমে উৎসাহিত রাখার চেষ্টা করা হয়। এর ফলে স্টাফ বা কর্মচারীদের এনার্জি লেভেল অনেকটাই বেড়ে যায়।

সেইসো শব্দের অর্থ Shine অর্থাৎ চকচকে। সহজ ভাষায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। আর মনোবিজ্ঞানও এটা বলছে যে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকলে সেটি মনের উপরও প্রভাব ফেলে। শরীর ও মনকে করে তোলে নির্মল। ফলে কাজে আসে উদ্যম। সেজন্য যে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সমস্ত কর্মচারীদের মানসিক উদ্যম জরুরি । এই অবশ্যম্ভাবী কাজকে কোম্পানির স্টাফদের মধ্যে ক্রমাগত বজায় রাখার জন্য মাঝে মাঝে ট্যুর বা পিকনিকের ব্যবস্থা করা কিংবা ভালো কোন মোটিভেশন স্পিকারকে দিয়ে মোটিভেট রাখার চেষ্টা বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি করে থাকে। বর্তমানে এই প্রচেষ্টা পৃথিবীর ছোট বড় নানা প্রতিষ্ঠানে করে থাকে। এতে হয়তো কোম্পানির খরচ কিছুটা বেড়ে যায় ।তার পরিপেক্ষিতে কোম্পানি যেটা অ্যাচিভ করে সেটা কিন্তু অনেক বড় একটা বিষয়।

৪) সেইকেটসু (Seiketsu):

একটা হাতের যেমন পাঁচটা আঙুল সমান হয় না,একটা পরিবারে যেমন সকল মানুষ সমান হয় না, ঠিক তেমনি ভাবে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির সকল কর্মচারী ভালো হবে এটা কিন্তু ধরে নেওয়া বাতুলতা মাত্র। প্রত্যেকটা কর্মচারী সব সময় যে সঠিক সময়ে কাজে যোগ দেবে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে, কোম্পানির সকল নিয়মকানুন মেনে চলবে এরকম নাও হতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে যদি বেশ কিছু নিয়ম কানুন , যেমন – সঠিক সময় অফিসে আসা, অযথা চিৎকার চেঁচামেচি না করা ,যেখানে সেখানে ধূমপান না করা, যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা, কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কলিগদের মধ্যে কোনরকম তর্ক-বিতর্ক বা ঝামেলায় জড়িয়ে না পড়া, মারামারি না করা, নিজের কাজের টেবিল বা পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ,কোম্পানিতে আসা যে কোনো আগন্তুককে যথাসম্ভব সহযোগিতা ও সম্মান করা , এই Norm বা নিয়ম কানুন গুলো যদি লিখিতভাবে কোম্পানির বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে দেওয়া যায় এবং ব্রিফিং এর মাধ্যমে স্টাফদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয় ।সর্বোপরি ,যারা সেই নিয়ম কানুন সঠিকভাবে মেনে চলবে সেই ভাবে – – Best Category করে মান্থলি একটা পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয় ,তাহলে কিন্তু কোম্পানির স্ট্যান্ডার অনেকটাই বেড়ে যাবে। এটাই হল সেইকেটসু বা Standardize।

৫) শিটসুকি (Shitsuke):

একটা কোম্পানির যে সমস্ত নিয়ম-কানুন ,পরিকাঠামো যার জন্য সেই কোম্পানির এতটা উন্নতি সেই সমস্ত ধারাকে বজায় রাখতে হবে । আসলে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কার্যক্রমের ধারা বজায় রাখাই হলো শিটসুকি।

এক নজরে কাইজেন সিক্রেট গুলো আমরা দেখে নিতে পারি

1. স্বচ্ছতা ও নিয়মনিষ্ঠা :

কাইজেনের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ Rule হলো নিয়মনিষ্ঠা এবং স্বচ্ছতা। যেকোনো পদক্ষেপ যদি নিয়মনিষ্ঠ এবং স্বচ্ছতার সাথে প্রয়োগ করা যায় তাহলে সাফল্য কিন্তু খুব সহজেই আমাদের হস্ত গত হবে ।এটি কৌশলে একটি সুষম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ী উন্নতির জন্য ব্যবহার করাটাই বিশেষগুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।

2. কর্মীদের সহযোগিতা:

কাইজেন সিক্রেটসের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ Rule হলো যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মীকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভালো এবং মন্দ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। যাতে তারা ওই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেন ।সমস্ত কর্মীদের সহযোগিতা। প্রতিটি কর্মীর মতামত এবং তাদের ঐকান্তিক ভালোবাসা বা আন্তরিকতা কে কাজে লাগাতে পারলেই ওই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য শুধু সময়ের অপেক্ষা । আমরা সকলেই জানি , কোন প্রতিষ্ঠানের একজন দক্ষ কর্মী ওই প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ । সেই জন্য সেই মানুষগুলো যাতে আন্তরিকভাবে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির বিষয়ে আগ্রহী হয় এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে । এই বিষয়ে কিছু খরচ খরচা হলেও বৃহৎ স্বার্থে সেটা করতেই হবে।

3. দক্ষ প্রশাসনিক সংগঠন:

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান উন্নতির জন্য চাই, নিয়মিত নতুন নতুন উন্নত মানের কর্ম পদ্ধতি অনুসন্ধান করা এবং সেগুলির সফল প্রয়োগ করার জন্য দক্ষ প্রশাসনিক সংগঠন।

4. অনুশীলন ও মূল্যায়ন:

প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন যে কর্মপদ্ধতি ,নিয়ম কানুন, আচার-আচরণ, যেটা মেনে চলার কথা সেগুলি ঠিকঠাক ভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা বা পালন করলেও কোন কোন বিষয় পালনের ক্ষেত্রে কর্মীদের অনীহা দেখা যাচ্ছে সেগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে এবং নিয়মিত অনুশীলন করে পুনরায় ঠিকঠাক ভাবে সেগুলির প্রয়োগ করার বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন ও সঠিক পদক্ষেপ অবশ্যম্ভাবীভাবে বাধা বিঘ্ন দূর করে একটি উন্নত গঠনমূলক উন্নয়নের দিশারী হতে পারবে হয়ে উঠবে । এজন্য সেজন্য সাফল্য ও উন্নতির পরিস্থিতির সমাধান সূত্র নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন এবং মূল্যায়ন করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

5. মূল্য সংস্করণ:

Kaizen Rule এর অতিসম্প্রতি update হলো , উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রডাক্ট বা সার্ভিসের মূল্যমান বিষয়ে অতি গুরুত্ব প্রদান দৃষ্টিভঙ্গি যত্নের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে । দেখা যায় প্রতিষ্ঠানগুলি সাধারণত মূল্য সংস্করণের মাধ্যমে তাদের পণ্য এবং পরিষেবা পরিমাণের উন্নতির জন্য সহায়ক হয়েছে। আবার কখনো কখনো মূল্য সংস্কার কাস্টোমারের আর্থিক বিষয়ের বিপরীত হয়েছে ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের Sale তো বাড়েইনি ,উল্টে নেমে গেছে বেশ কিছুটা। সেজন্য মূল্যমান বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে বিশেষ একটি মনিটরিং টিম থাকা প্রয়োজন । যার কাজ হবে মার্কেটে নেমে কাস্টমারের আর্থিক ক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজখবর নিয়ে সেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের দাম বা মান কমানো বা বাড়ান।

6.Strong Management System:

যেকোনো প্রতিষ্ঠানেরই মেরুদন্ড হলো সেই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এই ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যদি দুর্বল হয় তাহলে সেই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কোন দিনই সেভাবে নিজেদেরকে উন্নত করতে পারে না ।সেজন্য মালিকপক্ষকে অবশ্যই ম্যানেজমেন্ট টিম তৈরি করার সময় দক্ষ টিম মেম্বার কালেকশন ও সিলেকশন করার প্রয়োজন আছে,এক্ষেত্রে কোন কম্প্রোমাইজ করা চলবে না । সেই সমস্ত দক্ষ টিম মেম্বারদের কাজ হবে নতুন নতুন পদ্ধতির অনুসন্ধান এবং তার সফল প্রয়োগ ।

7. শিক্ষার্থীদের স্বাধীন অনুশীলন:

কাইজেন সিক্রেটস এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্ভুক্তি হলো দক্ষ ম্যানেজমেন্ট যে সমস্তনতুন নতুন পদ্ধতি অনুসন্ধান করে বের করছেন সেগুলো যাতে খুব সহজে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মীদের দিয়ে নিয়মিত অনুশীলন করিয়ে নেওয়া যায় ,সেই বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখা । সঠিক অনুসন্ধান এবং সঠিক প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োগের দিকে নজর রাখতে হবে। যেটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় তীরে এসে তরী ডুবতে পারে।

8. স্থিতিশীলতা:

কাইজেন সিক্রেটস অনুসারে, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন আচার-আচরণ বা বিধি নিষেধ আরোপের ক্ষেত্রেও একটি স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। হঠাৎ মনে হল আর দুম করে যে কোন নিয়ম চালু করে দিলাম , আবার দুম করে কোন সিস্টেম বন্ধ করে দিলাম — এ দুটোর কোনটাই কিন্তু একটি উন্নত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির লক্ষণ নয় । এমন হতে পারে কোন নিয়ম বা পদ্ধতিতে হয়তো কোম্পানির ক্ষতি হচ্ছে ,সেক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে কিভাবে তার সমাধান করা সম্ভব তার সমাধান সূত্র বের করে তারপরে গ্রহণ বা বর্জন করা উচিত। এতে ম্যানেজমেন্ট এর উপরেও কর্মীদের ভরসা থাকবে।

অবিচ্ছিন্ন উন্নতির সোপান কাইজেন

কাইজেন সিক্রেটস অনুযায়ী উপরোক্ত আটটি রুল বা নিয়ম যদি কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এপ্লাই করতে পারে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছন্ন উন্নতি সম্ভব । আর এই অবিচ্ছিন্ন বা ক্রমবর্ধমান উন্নতিই পারে একটি কোম্পানিকে অতি অতি উন্নত মানের কোম্পানিতে উন্নীত করতে। সেজন্য দক্ষ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে উন্নতি নিরবিচ্ছিন্নভাবে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট চালিয়ে যেতে হবে এবং দক্ষ কর্মীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সেই নিয়ম-কানুন এপ্লাই করতে হবে । এর ফলে সময়ের সাথে সাথে কোম্পানির বা ওই প্রতিষ্ঠানে বা কোন ব্যক্তির ডেভলপমেন্টও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এগিয়ে চলবে ।

আসলে কাইজেন Law বা কাইজন Rule বা কাইজেন সিক্রেটস হল একটি উন্নয়নের দিশা সূচক একটি গঠনমূলক ধারনা । যা একটি সাধারণ প্রতিষ্ঠানকে বা সাধারণ মানুষকে সাধারণ পরিস্থিতি থেকে বের করে এনে একটা অসাধারণ উন্নয়নের প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপিত করে। এতে কোম্পানি ও ব্যক্তি উন্নতি স্থিতিশীলএবং গঠনমূলক রূপ পরিগ্রহ করতে ।

এই রুলসগুলো ব্যবহার করে বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠান নিজেদেরকে আরো উন্নত এবং স্থিতিশীল করেছে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভেঙে পড়া জাপানের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করা। নিশ্চয়ই এই সিক্রেটগুলোর মধ্যে এমন কিছু নির্যাস আছে যেটা মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতি কেউ সব মহিমায় উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। সেজন্য বর্তমান সময়েও ছোটখাটো কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তি যদি নিজেদেরকে আরো উন্নত ও স্থিতিশীল একটা জায়গায় নিজেদেরকে ধরে রাখতে চান তাহলে কাই যান কাইজেন রুলের কোন বিকল্প বোধহয় আর একটিও নেই।

এই ধরনের আরো লেখা পাওয়ার জন্য নজর রাখুন আমার ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে।

Leave a Comment