তুই-তোকারি : সেকাল-একাল

কেন তুই-তোকারি ?

তুই-তোকারি
তুই-তোকারি

আমরা অনায়াসে তুই-তোকারি করে এবং নানা ভাবে মানুষকে সম্বোধন করে থাকি ।বয়স, সম্পর্ক ও সম্মান ভেদে এই সম্বোধন ও উলটে পালটে যায় ।আমরা কাউকে আপনি বলি,কাউকে তুমি, তো কাউকে তুই । সবই তো ঠিক ঠাকই আছে,তবে সমস্যা টা কোথায় ???

সমস্যা টা এখানেই । এক শ্রেণীর মানুষ আছে বা আছেন যাদের সম্বোধনের মাত্রাজ্ঞান আছে,যারা সঠিক ভাবেই জানেন কাকে কি বলে সম্বোধন করতে হয়। কে আপনি, কে তুমি বা কাকে তুই বলতে হবে । অনেক মানুষ আছে যারা কাউকেই তুই বলা পছন্দ করেন না।এমনকি নিজেরাও ব্যক্তিজীবনে তার প্রয়োগ করেন না।

আবার আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ আছেন যারা আবার ছোটো বড়ো সবাইকেই আপনি বলে থাকেন ।এটা মেনে নেওয়া চলে।কিন্তু এক প্রজাতির মানুষ আছে যারা প্রায় সবাইকেই তুই/তোকারি করা পছন্দ করে। চেনা নেই শোনা নেই “তুই “,বয়সের ছোটো বড়ো জ্ঞান নেই “তুই “

পারলে সবাইকেই তুই তোকারি করে, এদের আচরণ দেখে আমার অনেক সময় এটা মনে হয়েছে এরা বাড়িতে কি করে ??? নিজের বাবা মাকে ও কি তূই/তোকারি করে ?? খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তারা কখনোই এটা করে না।

(এখানে বলে রাখা ভালো ,আঞ্চলিকতার প্রভাবে অনেক জায়গায় মা-বাবা ও স্ত্রী কে ও তুই বলার রীতি প্রচলিত আছে, সেটা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার ।) এই ধরনের আরো আর্টিকেল পাবার জন্য এখানে ক্লিক করুন করুন। ভালো লাগলে কমেন্ট করুন ও শেয়ার করুন।

তাহলে ওই লোকগুলো এমন ব্যবহার করে কেন ? তাদের কে প্রশ্ন করে জানা গেছে, তারা নাকি সকলকে ভীষণ আপন ভেবে তূই/তোকারি করে থাকে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে এই যুক্তি আদপেই ঠিক নয়, এটা অসম্মান করার একটা বাহানা মাত্র। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে নামী-দামী মানুষদের মধ্যে ও এই রোগ সংক্রামিত ।

ঝগড়াঝাঁটি: তুই-তোকারি
ঝগড়াঝাঁটি: তুই-তোকারি

এখানে একজন মানুষের উদাহরণ দেওয়ার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। নামটা বলছি না তবে পদবি হলো ঘোষ। একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। তিনি টিভিতে একটা অনুষ্ঠান করতেন। তার মধ্যে সকলকে তুই বলার একটা বিশাল প্রবণতা ছিল। তিনি প্রায় সকলকেই তুই বলতেন। এই নিয়ে রসিক মহলে একটা কথা প্রচলিত হয়ে গেছিল, যে–উনি যদি মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গেও কোন আড্ডা দিতে উপস্থিত হতেন, তাহলে হয়তো তাকেও তিনি তুই-তোকারি করতেন। এ কথার যদিও কোন বাস্তব সত্যতা নেই। সবাই মজা করেই এই কথাটা বলতেন।

আসল কথা হলো, এই মানুষগুলো নিজেকে খুব বড়ো ভাবে।নিজেদের অহংকার প্রকাশ করার জন্য এবং অন্য কে ছোটো করবার জন্য তারা পরিকল্পিত ভাবে এটা করে থাকে।এছাড়া এদের পরিবারের দেওয়া শিক্ষা বিষয়ে ও প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়।তাদের পারিবারিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নিলে দেখা যাবে যে তাদের পরিবার ও যথেষ্ট শিক্ষিত এবং আভিজাত্যপূর্ণ নয় । সেজন্যই তাদের ভিতরে এই খারাপ প্রবণতা প্রবেশ করেছে।

এ বিষয়ে অনেকেই বলে থাকেন, যে বাজে সঙ্গ, এবং নিজেদের হাম বড় ভাব তাদেরকে এই আচরণ করতে বাধ্য করে। আর এক ধরনের মানুষ আছে, যারা চিটিংকরে,মানুষ কে ঠকিয়ে,গরিবের পেটে লাথি মেরে হয়তো দু-পয়সা কামিয়েছে, শিক্ষা দীক্ষার বালাই নেই । এদের ভিতরেও এই ধরনের আচরণ প্রকাশ পায়।

আবার এক শ্রেণীর মানুষ আছে যাদের পরিবার বা বাবা-মা শিক্ষিত হলেও ,পরিবারের থেকে দীর্ঘদিন দুরে থাকার কারনে, কিংবা কু সঙ্গে মেলামেশার ফলেও এটা হয়ে থাকে ।এরা এতই উদ্ধত আর অবিনয়ী হয়ে ওঠে যে,মানুষ এদের কে ঘৃণা করে। সামনে কিছু না বলতে পারলেও পিছনে গালাগালি করে।কারো কাছে এদের সম্মান বলে কিছু থাকে না। মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন

এদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত? আমার এক বন্ধুর মতে,আমানুষের সঙ্গে অমানুষের মতো ই আচরণ করা উচিত ।না হলে ওদের শিক্ষা হবে না। ওরা যখনই কাউকে তুই তোকারি করবে তখনই ওদের কেও তূই তোকারি তে জবাব দিতে হবে।

সারদা মা : রামকৃষ্ণ
সারদা মা : রামকৃষ্ণ

এই প্রসঙ্গে ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের একটি ঘটনার উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারলাম না ।শ্রীমা সারদা বলেছেন:ঠাকুর কখনো আমাকে “তুই “বলে সম্বোধন করেন নি। দক্ষিনেশ্বরে একদিন শ্রী রামকৃষ্ণের ঘরে মা খাবার নিয়ে গেছেন । ঠাকুর সেটা খেয়াল করেন নি।যথাস্থানে খাবার রেখে মা চলে আসছেন, এমন সময় শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর ভায়ের মেয়ে লক্ষ্মী খাবার দিয়ে গেলেন মনে করে বললেন: ‘দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যাস’।

শ্রীমা বললেন:” আচ্ছা “।শ্রীরামকৃষ্ণ মায়ের গলা শুনে চমকে উঠলেন।বললেন:’আহা,তুমি ! আমি ভেবেছিলুম লক্ষ্মী—-কিছু মনে কোরো না।’ এমন ভাবে বললেন যেন কত অপরাধ করে ফেলেছেন ।’দিয়ে যাস’ বলেছিলেন, তার জন্যেই এত সঙ্কোচ ! পরেরদিনেও মায়ের সামনে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বললেন : ‘দেখো গো, ভেবে ভেবে সারারাত আমার ঘুম হয় নি—কেন এমন রূঢ় বাক্য বলে ফেললুম ।”

মহান পুরুষ
মহান পুরুষ

—–এই হল মহাপুরুষ ।

Leave a Comment