অন্য জীবনের কথা : স্বপ্ন
পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হলো মানুষ। মানুষ এজন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ যে কারা শুধুমাত্র খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার বাইরেও নানা রকম উন্নয়নশীল কাজকর্ম সৃজনশীল কাজকর্ম মাধ্যমে নিজেদের অতিরিক্ত প্রতিভাকে তুলে ধরার সুযোগ পায়। এবং তুলে ধরে। কারণ তারা স্বপ্ন দেখতে পারে, এবং সেই স্বপ্ন পূরণ করার আপ্রাণ চেষ্টায় মানুষকে পৃথিবীর অন্য প্রাণী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করেছে।
পৃথিবীর আর কোন প্রাণীর এই স্বপ্ন দেখার সুযোগটা নেই। অন্য প্রাণীরা স্বপ্ন দেখে কিনা সেটাও গবেষণার বিষয়। তবে জীবন বিজ্ঞান থেকে যতটুকু জানা যায় ,অন্য প্রাণীদের জীবন চক্রের মধ্যে শুধুমাত্র খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা এবং বংশবৃদ্ধি করা ছাড়া, সে রকম কর্মকাণ্ড বিশেষ একটা নজরে পড়ে না। অর্থাৎ মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীরা স্বপ্নহীন জীবন যাপন করে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।
একমাত্র মানুষই প্রচন্ড পরিমাণ অভিনব ক্ষমতার অধিকারী। সে কখনোই খেয়ে পড়ে শুধুমাত্র খেয়ে পড়ে আর বংশবৃদ্ধি করে বেঁচে থাকার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনি। মানুষ স্বপ্ন দেখে বলেই ,মানুষ তার কর্মকাণ্ডের পরিধিকে অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছে। এর জন্য মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক জীবন অনেক সময়ে নানা রকম সমস্যায় নিমজ্জিত হয়েছে। তবুও মানুষ কিন্তু হাল ছাড়ে নি। ভেঙে পড়ে নি ।
এই স্বপ্নই মানুষকে হাল না ছাড়ার মানসিকতা দৃঢ় করতে সাহায্য করে। মানুষ জীবনে নানা রকম কিছু করার কথা ভাবে, যার ফলে এত আবিষ্কার, এত উন্নয়ন এবং এত রকমের রঙ-বে- রঙের কর্মকাণ্ড।
তবে সবাই কি এই ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের অংশীদার হতে পারে ?
উত্তর সব সময় কিন্তু হ্যাঁ হয় না , কখনো কখনো উত্তর হয় না !
এই সবকিছু বিশ্লেষণ করার জন্য যখন আমরা আমাদের জীবনের একটি প্রান্তে এসে উপস্থিত হই,তখন আমরা ভাবি যে আমাদের কি হওয়া উচিত ছিল, আরো কি করতে পারতাম । তখন দেখা যায় ,আমাদের যা উদ্দেশ্যে বা আশা ছিল তার থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছি বা অনেক কিছুই আমরা করতে পারতাম ।
এর পিছনের আসল সত্য হলো—-মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তির যে সম্ভাবনা থাকে তার সবটাই সে ব্যবহার করে না । বলা যেতে পারে মানুষ সেটা ব্যবহার করতে পারে না । মোটের ওপর মানুষ তার অসীম শক্তির এক অতি সামান্য অংশের পরিসরে বাস করে এবং তা ব্যবহার করতে সমর্থ হয়।
ফলে, যদিও তার মধ্যে অসীম সম্ভাবনা ছিল—-সে তার সামান্য অংশ ব্যবহার করে নিজেকে সারাজীবন অক্ষম করে রেখেছে—–কথাগুলি বলেছেন প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস্ ।
ধরা যাক একটি বিশাল মাঠে খোঁটায় একটা লম্বা দড়ি দিয়ে একটা গরু বাঁধা আছে।নিজের খুঁটির চারপাশে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেতে খেতে সে দড়িটির দৈঘ্য ঐ খুঁটিতে জড়িয়ে জড়িয়ে ছোটো করে ফেলে।ফলে সে মাঠের খুব সামান্য অংশেই চরতে পায়,ঘাস খায় ।
এতে তার স্বাধীনতা অনেকটাই খর্ব হয় ।এইভাবে মানুষও তার নিজের ছোট্ট গন্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখে, তার মধ্যে কি অনন্ত শক্তি ,কি অসীম সম্ভাবনা আছে তা সে বুঝতে চেষ্টা করে না।
সেজন্য মহান মনীষীরা বলেছেন , আমরা যদি আমাদের জীবনের গণ্ডি টাকে বা পরিধিটাকে ক্রমাগত বাড়িয়ে নিতে পারি , তাহলে আমাদের জীবনের এবং জীবন যাপনের গুণ ও মান অনেকটাই বেড়ে যায়। সেজন্যে, জীবনে ভালো কিছু করার জন্য ভালো মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, ভালো ভালো বই পড়তে হবে, এতে চিন্তা ভাবনায় স্বচ্ছতা আসবে ও সাবলীল চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ।
আর এই ক্ষমতা বৃদ্ধি আমাদেরকে আরো ভালো জীবন উপহার দেবে।
কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়, আমরা বিপথে চালিত হচ্ছি বা খারাপ মানুষদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
এর কারণ হলো সঠিক পথ কোনটা সেটা নিজে বুঝতে না পারা এবং সঠিক বা ভালো মানুষ কারা সেটা চিনতে না পারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় খারাপ মানুষদের উদ্দেশ্য এবং খারাপ পথের পরিণতি আমরা অনেক পরে বুঝতে পারি তখন দেখা যায় আমাদের জীবনের অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গেছে।
আমাদের একটা কথা মনে রাখা উচিত, আমরা যখনই বুঝতে পারব যে, আমরা ভুল ট্রেনে উঠে পড়েছি , যা আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে কোনদিনই নিয়ে যেতে পারবে না । সেটা বুঝতে পারা মাত্রই আমাদের উচিত সেই ভুল ট্রেনে থেকে নেমে পড়া এবং পুনরায় সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেবে এরকম ট্রেনে উঠে পড়া।
পূর্বের ভুল নিয়ে শুধু শুধু হা- হুতাশ করে কোন লাভ হবে না। এতে শুধু সময় নষ্ট হবে। যন্ত্রণাও বাড়বে।
এই ধরনের লেখা আরো পাবার জন্য এখানে ক্লিক করে আমার সঙ্গে থাকুন।
1 thought on “স্বপ্ন ও স্বপ্নের উড়ান”