অনুশাসনের ছক্কা পাঞ্জা

আমার ছেলেকে অনুশাসন করার আপনি কে ? ?

ভীষণ অবাক করা একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা চলছি । আমরা যেন কেমন একটা হয়ে যাচ্ছি ! নিজেদের ভালো কি আমরা বুঝতে পারছি না ? না খারাপটাকে বুঝেও , না বোঝার ভান করছি । কি অদ্ভুতুড়ে একটা ব্যাপার না ?

আমরা বুঝতে পারছি এতে আমাদের ভালই হবে কিন্তু অনুশাসন মেনে নিতে পারছি না। যদি আমরা নিজেদের ভালো নিজেরা মেনে না নিতে পারি সেই অবস্থাকে কি বলা যায় বলুন তো ?

কেন আমি এই কথা বলছি ?

এখন দেখবেন ,পড়াশোনার পাঠ অনেকটা শিকেই উঠেছে । যে পরিবারের মা-বাবার মধ্যে খানিকটা শিক্ষার ছায়া আছে তারা নিজের প্রয়োজনে বা নিজের গরজে তাদের সন্তানদের পড়াশোনা শেখানোর প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল এবং তারা করাচ্ছেন ও ।অনুশাসন এখানে বংশগত ।

ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষকের
ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষকের মধুর সম্পর্ক।

অপরদিকে এক অন্য একটি দল আছে যারা সেভাবে তাদের সন্তানদের পড়াশোনার বিষয়ে ততটা নজর রাখতে পারেন। না। তাদের পড়াশোনা অনেকটাই School নির্ভর, অনেকটাই টিউটর ভিত্তিক। এই শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার হাল কিন্তু ততটা ভালো না ।

তার উপর গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো হাজির মোবাইল । যেটা অনেকাংশেই ছাত্র জীবনকে শেষ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনি একমত নাও হতে পারেন ! এই দল সারাদিন মোবাইলের পিছনে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখে। সেখান থেকে তারা কি পায় ? কি অর্জন করে ? কি শেখে ? তা ভগবানই জানে ! সব সময় দেখবেন , তারা মোবাইলে ভীষণভাবে ব্যস্ত । কথা বলার সময় পর্যন্ত নেই ।

চিন্তা এই দলটিকে নিয়েই । কারণ যেহেতু এদের শিক্ষা দীক্ষা পুরোটাই স্কুল নির্ভর। বাড়িতে সেভাবে দেখানোর কেউ নেই। সেজন্য এদের বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। আর এই কাজটিকে আরো এগিয়ে দেন এই ছাত্র-ছাত্রীদের অবোধ বাবা-মায়েরা।

এই বাবা মায়েরা তাদের সন্তানের ভালো করতে গিয়ে , না বুঝে ক্ষতি করে ফেলেন বেশিরভাগ সময়। ভিতরে শিক্ষা-দীক্ষার বিষয়টা খুব একটা বেশি এদের মধ্যে দেখা যায় না । তবে ইনকাম বা উপার্জন বা অনেক ক্ষেত্রেই এদের কাছে আছে প্রচুর টাকা। যার ফলে নিজেদেরকে অন্যদের থেকে একটু বেশিই জ্ঞানী ভেবে ফেলে। অনেক সময়ে এরা অন্যের ভালো পরামর্শ কে ও সেরকম গুরুত্ব দেন না। বরং সময় এবং সুযোগ পেলেই ‘ তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত মানুষদের অপমান করে থাকেন। এদের মধ্যে হাম বড় একটা ইগো কাজ করে। ফলে সেই শিক্ষিত মানুষরাও আর তাদের কোন উপকার করতে এগিয়ে যান না ।

আগেই বলেছি এনারা নিজেদের সন্তানকে এতটা ভালবাসেন যে, তাদের সন্তানকে অন্য কেউ কিছু বললে, তারা আর সহ্য করতে পারেন না। বেয়াড়া সন্তানদের কথায় বিশ্বাস করে ,বুঝে না বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার প্রতিবাদ করতে।

শিক্ষকদের প্রতি অবিচার

প্রতিবাদ ও আন্দোলনের হাত থেকে কিন্তু শিক্ষকরাও নিস্তার পাচ্ছেন না।

School বা কলেজে নিজেদের পছন্দের বাইরে কোন ঘটনা ঘটলেই অবোধ বাবা মায়ের বা তাদের বন্ধুবান্ধবেরা সদলবলে লাঠি সোটা নিয়ে হাজির হয়ে পড়ছেন স্কুল বা কলেজ ক্যাম্পাসে। সেখানে গিয়ে, অপছন্দের সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারা অবান্তর ঘটনার অবতারণা করছেন। একবার ভেবেও দেখছেন না এ বিষয়ে শিক্ষকের দোষ কতটা ! বা দোষটা তার বেয়াড়া সন্তানের ! তারা সন্তান স্নেহে অন্ধ হয়ে ঘটিয়ে ফেলছেন নানারকম অপ্রীতিকর ঘটনা।

যখন থেকেই এই ধরনের ঘটনার প্রচলন হয়েছে ,ঠিক তখন থেকে সমাজে বেয়াদবের সংখ্যা বেড়ে গেছে । যখন থেকে একটা কথার প্রচলন শুরু হয়েছে সেটা হল –” আমার ছেলেকে শাসন করার আপনি কে ? এবং স্কুলে ও কলেজে মাস্টারমশাইদের শাসন করার ক্ষমতা হারিয়ে গিয়েছে । সেদিন থেকেই পচন শুরু হয়েছে আমাদের এই সমাজের ।

এর ফলাফলও ইতিমধ্যে ফলতে শুরু করেছে , দেখা যাচ্ছে সেই সমস্ত অভিভাবক যারা সন্তানকে শাসন করার প্রতিবাদে শিক্ষককে অপমান করতে এমনকি মারধর করতেও দ্বিধাবোধ করেনি । সেই সন্তান ওই বাবা মাকেই একসময় আর মানছে না । অপমান করছে যা তা ভাবে । এমনকি গায়ে পর্যন্ত হাত তুলছে।

তাই সকল অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলবো ,মাস্টারমশাইদের শাসন না করে, নিজের বেয়াদব ছেলেটাকে শাসন করুন। মাস্টার মশাইরা ছাত্র-ছাত্রীদের শাসন করেন মানুষের মতো মানুষ করে তোলার জন্য , যাতে সেই ছাত্র-ছাত্রী সমাজের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে এবং সে ভবিষ্যতে একজন সুনাগরিক হয়ে ওঠে ।

একটা কথা আমরা সকলেই জানি, যে কোন বাবা-মাই তার সন্তানের ভালো চান । কিন্তু বাবা-মায়ের পরে যদি কোন মানুষ অন্যের উন্নতিতে গর্ববোধ করেন সেটা হলেন একজন শিক্ষক।

অনুশাসনের প্রয়োজন আছে

আমি জানি , এই কথাটা বা এই আবেদনটা অনেকের কাছে হাস্যকর ঠেকবে।

আর যদি আমরা আমাদের সন্তানদের ভালোর জন্য শিক্ষকদের হাতের সেই হাড় হিম করা বেতটা ফিরিয়ে না দিতে পারি। তাহলে সন্তানের হাতের বেতের আঘাত যে আমাদের পিঠেই পড়বে সেটা বলাই বাহুল্য। আর এই ঘটনা বোধহয় কারোর পক্ষেই সুখকর হবে না।

এখনো সময় আছে ,আমরা যদি শিক্ষা ও শিক্ষককে পূর্বের মর্যাদা দিয়ে ছাত্রদের জীবন গড়ে দেওয়ার নিঃশর্ত দায়িত্ব তুলে দিতে পারি, তাহলে, ছাত্ররা যেমন বাঁচবে। পাশাপাশি বাঁচবে শিক্ষা, সমাজ ও দেশ।

এই ধরনের লেখা আরো পাবার জন্য আমার ব্লগ ওয়েবসাইট , ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেজকে ফলো করুন।

Leave a Comment