ঈশ্বর কি ? কেমন দেখতে ? তিনি আছেন কি নেই ? তিনি সাকার না নিরাকার ?
----এইসব নানা রকম প্রশ্ন নানা ভাবে ঘোরে ফেরে আমাদের সমাজে এবং মানুষের মনের আনাচে কানাচে । অপ্রকাশ্যে বা প্রকাশ্যে মানুষ তর্ক বিতর্কে অবতীর্ণ হন স্থান-কাল-পাত্র ভুলে।বিষয় যাই হোক না কেন,তর্কে সে-ই জয়ী হয়--যে বাগ্মি,চোখা চোখা যুক্তিবাণে যে বিধ্বস্ত করে বিরুদ্ধ পক্ষকে।জয়ী ব্যক্তি জয়ের গর্বে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপরাজেয় ভাবে ।অপর দিকে যে হেরে যায়, সেকি নিরাশ হয়ে পড়ে? না নিজের বিশ্বাসে অবিচল থাকে ? এটিও একটি বিতর্কের বিষয় হতে পারে ।
আমি সেসব বিতর্কে না গিয়ে মানুষের অনুভূতি ও বিশ্বাসের পক্ষে ওকালতি করবো ।এক শ্রেণীর মানুষের আচার আচরণ দেখে আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা করে থাকি ।যেমন গুরুদেব শ্রেণী। যারা সাধারন মানুষের বিশ্বাসকে নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য সুকৌশলে ব্যবহার করে থাকে।আপনি যদি সেই সমস্ত সরল মানুষজনকে বোঝাতে যান যে ,গুরুদেব আপনার মতোই একজন মানুষ ।তিনি কখনোই আপনাকে ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ দেখাতে পারবেন না । কারণ ঊনি নিজের উপার্জন এবং দুধে-ভাতে জীবন যাপনের জন্য আপনাকে ব্যবহার করছেন
আসলে সাধারণ মানুষের অন্ধবিশ্বাস ই হল ওই সমস্ত তথাকথিত গুরুদেবদের একমাত্র ভরসা ।যে সমস্ত গুরুদেব মানুষের মঙ্গল চান,তারা কখনোই চাল-কলা-মুলো’র দিকে তাকিয়ে থাকেন না।
অনেক বিশিষ্ট ধর্মীয় পাঠক আছেন, যারা বলে থাকেন—-আপনি যত পাপ বা অপকর্মই করুন না কেন—মন দিয়ে ঈশ্বর কে ডাকলে বা তাঁর নাম করলে, তিনি অবশ্যই তাকে রক্ষা করবেন আসলে কি তাই !!! আর সেই ভরসাতেই কি সমাজের বড় বড় অপরাধী, যারা এলাকায় কুখ্যাত বা দাগি—-তাদেরকে হামেশাই বড় বড় পুজো করতে দেখা যায় !! এটা কি আসলে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য না সাধারণ মানুষের চোখে পট্টি পরানোর জন্য ।
আবার, এলাকার নামী ব্যবসায়ীর বিরাট মন্দির নির্মাণ করে পূজা পাঠের ব্যবস্থা বা বছরের বিশেষ দিনে গরিব নিরন্ন মানুষকে খাওয়ানো—এটি কি ঈশ্বর বিশ্বাসের নমুনা না তার বড় ব্যবসার আড়ালে চলা অন্য কিছু কে আড়াল করার প্রচেষ্টা মাত্র !!!
একটু খোলা মনে,খোলা চোখে বিচার করলে, সবার কাছেই বিষয়টি জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে ।যদি আপনি ঈশ্বর বিশ্বাস না করেন—-তাহলে তো আপনি এই ভন্ড শ্রেণীর খপ্পর থেকে প্রথমেই বেঁচে গেলেন । বাকি রইলো যারা বিশ্বাস করেন ঈশ্বরের অস্তিত্বে ।
তাদের কাছে আমার কিছু বক্তব্য আছে—-যেমন, আপনি যেহেতু ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন—তাহলে এটি নিশ্চয়ই জানেন যে ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বজ্ঞ।তাহলে ঈশ্বর সর্বত্র আছেন এবং আমাদের ভালো-মন্দ কার্য কলাপ সবই তিনি দেখতে পাচ্ছেন, তাহলে আমাদের তো উচিত ভালো মানুষ হবার চেষ্টা করা এবং মন্দ কাজ কর্ম থেকে নিজেকে ও অন্যকে বিরত করা।কারণ এটা আমরা সকলেই জানি বা মানি,সেটা হলো আমরা জেনে শুনে কোনো খারাপ মানুষকে পছন্দ করবো না।ঈশ্বর কি এতই বোকা যে–জেনেশুনে বা পরিকল্পিত ভাবে খারাপ কাজ করার পর —-ঈশ্বর কে ডাকলে—-ঈশ্বর উক্ত ব্যক্তিকে পাপমুক্ত করবেন।
আমরা অনেক সময় বিষয় লাভের আশায় ঈশ্বরকে লোভ দেখায় বা ঘুষ দেবার চেষ্টা করি ।সেটা কেমন ??? যেমন—“আমার যদি চাকরিটা হয়, তাহলে আমি প্রথম মাসের পুরো মাইনেটা তোমায় দেব কিংবা সোনার টিকলি বানিয়ে দেব।আমরা এটা ধরেই নিই ,ঈশ্বরের ভীষণ অভাব, তিনি টাকা বা সোনার টিকলির লোভে আমাদের কামনা পূরণ করে দেবেন ।আসলে আমারা একশ্রেণীর ঘুষখোর ভন্ড মানুষদের সাথে ভগবান কে গুলিয়ে ফেলি।আমি শুধু ভাবি ,মানুষের কত বড় সাহস হলে —-ঈশ্বরকে ঘুষ দেবার চেষ্টা করে। ওই সমস্ত মানুষ আদপেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না ।ঈশ্বর ভক্তির ভান করে মাত্র ।
আবার আমাদের সমাজে একশ্রেণীর পুণ্যবান আছেন যারা মানত পূরণের জন্য বা মানত পূরণের পর কোথাও জোড়া পাঁঠা, কোথাও বা অসংখ্য নিরপরাধ পশুকে বলির নামে হত্যা করা হয় ।এই ঘটনা থেকে কি মনে হয়,,যিনি বা যারা এই নিষ্পাপ পশুদের হত্যা করছেন, তারা মহান মানুষ ??? আচ্ছা, এটা কখনো ভেবেছেন ?ঈশ্বর হলেন পরমপিতা বা মাতা উভয়ই,আর পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী কূল তাঁর সন্তান ।আর পিতা বা মাতা কি সন্তানের রক্তে খুশী হতে পারে?? কখনোই না—-এক শ্রেণীর নৃশংস মানুষ তাদের প্রতিহিংসা ও কচি মাংসের লোভেই এই কাণ্ডটি করে থাকে।
আসলে ঈশ্বর একটি অনুভূতি বা বিশ্বাস ।যা মনে ও মননে অনুভব করতে হয় ।ঈশ্বর বিশ্বাস বা ঈশ্বর ভক্তি কখনোই কোনো লোক দেখানো ব্যাপার নয়।সেজন্যই পরমহংস ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, “ঈশ্বরের পূজা করতে হয়—মনে,কোণে এবং বনে,অর্থাৎ মনের মধ্যে, ঘরের কোণে নিশ্চুপে এবং জনমানবশূন্য গভীর অরণ্যে ।
তার বদলে মানুষ এখন কি করছেন—-মঠ,মন্দির বা পূজার স্থান বানাচ্ছে রাস্তার ধারে, মোড়ের মাথায়, যাতে ব্যবসাটা ভালো হয়।আর একশ্রেণীর তথাকথিত ভক্ত সেজে গুঁজে সেখানেই ভীড় জমাচ্ছেন সানন্দে ।
আমি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ কে নতুন করে ভাবতে বলবো বিষয়টিকে ।পারলে আপনার সুস্থ চিন্তা ভাবনা দিয়ে, সহজ সরল মানুষগুলোকে ওই সমস্ত ভন্ডদের কবল থেকে বাঁচাতে সামান্যতম চেষ্টাটুকু করুন । এতে ঈশ্বর খুশী ই হবেন ।ঈশ্বর সব সময় ই ভালোর পক্ষে।
এই ধরনের আর্টিকেল পাবার জন্য এখানে ক্লিক করুন। চোখ রাখুন আমার ইউটিউব চ্যানেল দুটিতে
2 thoughts on “ঈশ্বর ও বিশ্বাস”