পুরুষের ছোঁয়া

পুরুষ তুমি ছুঁতে চাইলে এমনিভাবে ছোঁবে !!

এই যে বাসে ট্রেনে, রাস্তাঘাটে, ভীড়ের ঠ্যালাঠেলিতে পুরুষের ছোঁয়া বা পুরুষ মানুষ নারী শরীর ছুঁয়ে দেয় , তাতে কোন মেয়েরই হয়তো কখনোই কোনো আপত্তি থাকবে না । এমন তো কতবার হয়েছে। কতজনে কতভাবে মেয়েদের দিকে তাকিয়েছে , মেয়েদের শরীর ছুঁয়েছে।

ছোঁওয়া- ছুঁয়ির গোলক ধাঁধা
ছোঁওয়া- ছুঁয়ির গোলক ধাঁধা

একটা মেয়ের মুখ থেকে শোনা যাক ঘটনা গুলো …..

একবার জানো কি হল ? তখন বয়সটা বেশ অল্প। কলকাতায় লোকাল ট্রেনে চেপেছি। একটাই মাত্র স্টেশন মাঝে, কিন্তু একেবারে চাপাচাপি ভীড়। কোনরকমে ট্রেনে পা রাখতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। আমি ঝুলছি ট্রেনের বাইরে।

কোনরকমে একটা লোহার রড ধরে আছি, কিন্তু ঘাম ঘাম হাতে তাও পিছলে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা পুরুষালি হাত কনুইয়ের কাছটা ধরেই হ্যাঁচকা টানে ট্রেনের ভেতরের দিকে নিয়ে এলো আমাকে। আমি বললাম, প্লিজ ছাড়বেন না। আমি পড়ে যাব তাহলে। ছাড়ছি না। ভয় নেই। ভয় ছিল না আর।

আরেকবার। সেবার গায়ে জ্বর। মাথায় কি ঘুরছিল, চট করে হোস্টেল থেকে বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছে হল। ট্রেন নেই, কোন ভাল বাস নেই। ঝরঝরে একটা বাস যা পেলাম উঠে পড়লাম। তিলার্ধ জায়গা নেই বাসে। আমি গায়ে জ্বর নিয়ে ধুঁকছি দরজার কাছটায়। পিঠের ওপর হাত পড়ল।

একজন গ্রাম্য বৃদ্ধ বললেন, “বসবে মা ? আমি দাঁড়াতে পারব না। এই পাশটায় বস কষ্ট করে।” পাশে জায়গা ছিলনা তেমন। আমার মাথা তোলারও ক্ষমতা ছিল না। রীতিমত ওনার পায়ের ওপরে বসে পড়লাম। জানলার হাওয়া চোখেমুখে লাগল। আঃ শান্তি ! শান্তি ছুঁয়ে গেছিল সমস্ত শরীরে। এবং সেটা পৌঁছে গেছিল মনের গভীরে।

এরকম হয় কিন্তু। রাস্তাঘাটে কেউ কেউ হাঁ করে তাকিয়ে দেখে। অস্বস্তি হয়। আমারও হয়। কিন্তু কখনো কখনো খুব ভাল লাগে। একবার যেমন। কোথাও যাচ্ছিলাম, বই পড়তে পড়তে বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছি। শেষ স্টপেজে এসে কন্ডাক্টর ডেকে তুলল। চেয়ে দেখলাম একটা গন্ডগ্রাম। আর একটি ছেলে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

আমি পাত্তা না দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লাম। বিকেল হয়ে এসেছিল। কন্ডাক্টর বলল এরপর বাস আবার দু’ঘন্টা পর। একা একা দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি কি করব। দেখি পেছনে ঐ ছেলেটিও এসেছে। এখানে একটা দোকানে আমার বাইক রাখা থাকে। আমি পৌঁছে দেব?

না না। কি দরকার।

ভয় নেই! বাড়ি অব্দি পৌঁছে দেব, পরের বাস আসতে আসতে রাত।কি মনে হল! বললাম , চলুন।

ভাল করলে ধরে বসুন তো, চাপ নেই ! বসলাম।

আমাকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করে একদম বাড়ির দরজা অব্দি পৌঁছে দিয়ে গেল। আবার মাকে বলেও দিল, বলুন কাকিমা, বাসে ওভাবে কেউ ঘুমিয়ে পড়ে ? এই তাকিয়ে থাকাগুলোও বেশ লাগে তো। তারপর কেউ যদি এমনি এমনি আদর করে, ধর অচেনা কেউ, আমার তাও ভাল লাগে।

পুরুষ তুমি ছুঁতে চাইলে এমনিভাবে ছোঁবে
পুরুষ তুমি ছুঁতে চাইলে এমনিভাবে ছোঁবে

তখন সন্তানসম্ভবা আমি। দুর্গাপুজোয় লাইনে দাঁড়িয়ে অষ্টমীর প্রসাদ নিচ্ছি। খুব গরম। হাঁসফাঁস করছি। এক চল্লিশোর্ধ এগিয়ে এলেন। একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে আমায় বসিয়ে ভোগ নিতে গেলেন। একটু পরে এসে ভোগের খিচুড়ি, পায়েসের প্লেট আমার হাতে দিলেন। যাবার সময় গালে আলতো ছুঁয়ে বললেন, এই অবস্থায় অত রোদে কেন দাঁড়ালে? মুখটা দেখ, মা দুর্গা যেন।

তারও অনেকদিন আগে, বেশ পাঁচ-ছ’বছর আগের ঘটনা। জীবনে প্রথমবার রেডিওথেরাপি নিচ্ছিলাম, এই দিনদশেকের। তখন জানতামই না এর কি মাহাত্ম্য। ব্যাঙ্গালোরে থাকি। বিদেশ বিভূঁয়ে বদনাম করার লোক পাওয়া যায়, পাশে থাকার লোক কম।

প্রথম দুদিন বেশ নাচতে নাচতে থেরাপি নিলেও তৃতীয় দিনে এসে অবস্থা কাহিল। এরকমই একদিন থেরাপির জন্য অপেক্ষা করছি , অফিসের এক কলিগের ফোন এল। খুব কাছের নয়, মোটামুটি বন্ধু। জিজ্ঞেস করল কোথায় আছি। বললাম থেরাপি নিচ্ছি। আঁতকে উঠে বলল, “রেডিওথেরাপি চলছে , বলনি একবার ?”

হসপিটালের নাম জিজ্ঞেস করল। সেদিন থেরাপি সেরে বাইরে এসে দেখি রিসেপশনে দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় একটা চাঁটি মেরে বলল, আইডিয়া আছে কোনো কি হচ্ছে ? এবার থেকে আমি আসব সাথে, খবরদার আসবে না একা।” সেদিন চোখের জলটা আর দেখতে দিইনি।

Felling good
Feeling good

ছুঁতে হলে এমনি করে ছোঁওয়া উচিত । পুরুষ মানুষ এমনভাবে নারীর শরীর ছোঁবে, যাতে শেষ দিন অব্দি একজন নারী ওই পুরুষটাকে ভুলতেই পারবে না । পুরুষের ছোঁয়াটুকু মনে রাখবে সারা জীবন । একজন নারী যাতে, গর্ব করে, আনন্দ করে বলতে পারে , পুরুষ আমাকে ছুঁয়েছিল সেজন্যই বেঁচে ছিল আমার প্রাণ ,আমার মান, আমার সম্মান। ওই পুরুষের সেই ছোঁয়া আমি এখনো অনুভব করি । মনে হয়, ভাগ্যিস ওই ধরনের পুরুষ একটু হলেও অনেকখানি ছুঁয়েছিলে আমাকে। এখনও সেই ছুঁয়ে দেবার অনুভূতি বেঁচে আছে । ছুঁয়ে আছে হৃদয়ের প্রতিটি অলিন্দ।

সত্যিকারে পুরুষ যেন প্রত্যেকবার এমনি করেই ছুঁয়ে দেয় নারী শরীর । সত্যি বলছি, পুরুষের এই ছোঁয়া যে কোন নারীই মনে প্রাণে চেয়ে থাকে । সেই ছোঁয়াতে থাকে ভালোলাগা । সেই ছোঁয়াতে থাকে সম্মান । সেই ছোঁয়াতে থাকে পাশে থাকার অঙ্গীকার । সেটা তো আমরা চাইতেই পারি । এ চাওয়াতে লজ্জা কিছু নেই। এই চাওয়া সম্ভ্রমের ।

এই ধরনের আরো লেখা পাবার জন্য এখানে ক্লিক করুন। আমার ইউটিউব চ্যানেল facebook পেজ কেউ ফলো দিয়ে রাখতে পারেন এই ধরনের আর্টিকেল পড়ার জন্য। সঙ্গে থাকলে ভীষণ ভালো লাগবে। লেখার বিষয়ে কোনো কমেন্টস থাকলে অবশ্যই জানাবেন। বা আরো কি ধরনের লেখা আপনারা পছন্দ করেন, সেটা জানালেও চেষ্টা করব সেই ধরনের লেখা ভবিষ্যতে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

লেখা : সংগৃহীত // সূত্র: মন্দিরা দাস

Leave a Comment