স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা

স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার ভোলবদল

নিজের মতো করে, ইচ্ছানুুযায়ী কাজ করাকেই বেশির ভাগ মানুষ স্বাধীনতা বলে ভুল করেন ।আদপেই সেটা স্বাধীনতা নয়,স্বেচ্ছাচারিতা। বর্তমানে আমরা স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে গুলিয়ে ফেলছি । দেখা যাচ্ছে অনেক মানুষই উদ্দেশ্যপ্রণোদীত ভাবে স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা কে গুলিয়ে দিচ্ছে।

স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা
স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা

আমরা ফলাফলের প্রতি নজর না দিয়ে খেয়াল খুশি মতো কাজ করে যাওয়া কেই স্বাধীনতা বলে চালাতে চেষ্টা করি । এটাই কি স্বাধীনতা ? না ,স্বাধীনতার অন্য কোন গুঢ় অর্থ আছে ?

স্বাধীনতার অর্থ খানিকটা বোঝার জন্য একটু খোঁজখবর নেওয়া যাক।

চলুন চোখ রাখা যাক আমাদের খুব পরিচিত স্মার্টফোনের দিকে। স্মার্টফোন খুলুন দেখতে পাবেন বিভিন্ন বয়সের ছেলে এবং মেয়ে ও বাড়ির বউরাও নানা রকমের ভিডিও বানাচ্ছে। এবং আমরা সেটা দেখছি, শুধু দেখছি বা বলব কেন সেখানে লাইক কমেন্টস এর ছড়াছড়ি।

সেখানে কি হচ্ছে ? একদল ছেলে মেয়ে বা বউ, একেবারে খোলামেলা পোশাকে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও বানাচ্ছে। তাদের বিকৃত অঙ্গভঙ্গি, বিকৃত কথার মারপ্যাচ প্রচুর ভিউয়ার এনে দিচ্ছে। এই ভিডিও যে বানাচ্ছে এবং তার উদ্দিষ্ট যে ভিউয়ার্স আছে শুধুই যে তারা দেখছে তা কিন্তু নয় ! তার পরিবারের লোকজনও নিশ্চয়ই দেখছে বা তাদের চোখেও নজরে পড়ছে।

যদি নজরে না পড়ে তার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব নিশ্চয়ই তাকে কোন না কোন ভাবে জানাচ্ছে।

এক্ষেত্রে তাদের বাবা-মা বা পরিবারের ভূমিকাটা কি ? তাদের সাথে কথা বললে, বা তাদের বিষয়ে কোন কিছু জানাতে গেলে তাদের দিক থেকে একটাই যুক্তি বাএকটাই উত্তর আসে —ওরা তো বড় হয়ে গেছে ,যে কাজটা ওরা করছে সেটা নিশ্চয়ই ভালো বুঝেই করছে, যেহেতু ওরা বড় হয়ে গেছে, সেজন্য আমরা ওদের স্বাধীনতায় এখন আর হস্তক্ষেপ করতে পারি না।

আসলে পরোক্ষে তারা তাদের ওই বিকৃত কাজটাকেই সাপোর্ট করছে।

কারণ সেখান থেকে হয়তো একটা মোটা টাকা তারাই উপার্জন করছে । পরিবারের ওই সমস্ত লোকও কিন্তু খারাপ ভালোর বিচার করছে না, স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এক রকমের ছাড়পত্র তারা দিয়ে দিচ্ছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে যদি কোন কাজে পয়সা আসে সেই কাজ দৃষ্টিকটু বা ক্ষতিকারক হলেও সমস্যা নেই। এই শ্রেণীর মানুষ স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এই ধরনের বিকৃত রুচির কাজকে উৎসাহিত করছে অর্থের লোভে

অপসংস্কৃতির ঘেরাটোপে স্বাধীনতা
অপসংস্কৃতির ঘেরাটোপে স্বাধীনতা


আসলে আমরাই লোভে পড়ে, প্রচুর লাভের আশায় স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে গুলিয়ে দেবার চেষ্টা করছি ।

মহান মানুষ বা পন্ডিত ব্যক্তিদের মতানুযায়ী আকাঙ্খা অনুযায়ী সম্পূর্ণ ভোগের মধ্যে স্বাধীনতা নেই, স্বাধীনতা আছে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ।

বেশিরভাগ সময় মানুষ যা চায় তা পায় না । অনেক সময় উচ্চমূল্যবোধ ও শৃঙ্খলাবোধের সুবিধাগুলি উপলব্ধি করা সহজ হয় না।মনে হতে পারে শর্টকাট বা বিশৃঙ্খল পদ্ধতিই বেশি লাভজনক ও সুবিধাজনক । সেই পথ ধরে খুব তাড়াতাড়ি অর্থ উপার্জনের পথে এগিয়ে দেন অনেক অবুঝ অভিভাবক রাও। এতে চটজলদি সামান্য কিছু লাভ হয় না তা কিন্তু নয়—তবে সেটা সুদূরপ্রসারী বা দীর্ঘস্থায়ী নয়। একটা সময় পরে এই স্বেচ্ছাচারিতার ফলও তারা হাতে নাতে পায়। তখন কিন্তু আর সেই দুর্গন্ধময় জগৎ থেকে ফেরার বা ফিরিয়ে আনার কোন উপায় থাকে না।

শৃঙ্খলা মেনে চলতে গিয়ে আমাদের মনে হতে পারে, আমরা বোধহয় এগোতে পারছি না। আসলে শৃঙ্খলা আমাদের গঠনমূলক ভাবে ও স্থায়ী ভাবে বা বলা যেতে পারে সম্মানজনকভাবে এগিয়ে যেতেই সাহায্য করছে ভীষণভাবে । যেটা পরে বোঝা যায় ।

দেখবেন একটি অভিজাত বংশের মানুষজন অভাবে পড়লেও খুব সহজে বিপথগামী হয় না, কারণ তাদের এই বিপথগামী হবার পথে যা ভীষণ বাধার সৃষ্টি করে সেটা হল তাদের পারিবারিক কৃষ্টি ও কালচার। অপর পক্ষে তুলনামূলকভাবে কম খেত পরিবারের ছেলে মেয়েরা খুব সহজেই বিপথগামী হয়ে পড়ে, কারণ তাদের বিপথে যাবার পথে সেরকম কোন বাধা তাদের সামনে আসে না।

আমাদের জীবনের চলার পথে, আমাদের পারিবারিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি আমাদেরকে ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচাবার কাজ করে থাকে।, বেলাগাম জীবন কখনোই স্বাধীনতার অর্থ বহন করে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা শিক্ষা ও সংস্কৃতির সুতোই নিজেদেরকে বেঁধে রাখতে পারব। ততক্ষণ পর্যন্তই আমরা গঠনমূলক জীবনের দিকে এগিয়ে যাব। যখনই সেই বাধা ছিন্ন হয়ে যাবে, তখন আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।

স্বাধীনতার আসল অর্থ কি ?

একটি গল্পের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে, গল্পটি হয়তো অনেকের শোনা বা জানা। তাহলেও আর একবার শুনুন……

একদিন একটা ছেলে বাবার সঙ্গে ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো , বাবা , ঘুড়িটি কিসের জোরে উপরে উঠছে ? বাবা উত্তর দিলেন সুতোর জোরে । তখন ছেলেটি বলল, বাবা—সুতো তো ঘুড়িটিকে নিচের দিকে টেনে রেখেছে ! বাবা তখন ছেলেটির চোখের সামনে ঘুড়ির সুতো ছিঁড়ে দিলেন ।

ঘুড়ি ও স্বাধীনতা
ঘুড়ি ও স্বাধীনতা

ফলাফল কি হলো !!! —–ঘুড়িটি বেলাগাম হয়ে, অনেক দূরে গিয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়লো।

বাবা ছেলেটিকে বললেন, যতক্ষণ ঘুড়িটি সুতোর মাধ্যমে লাটাইয়ের সাথে একজন মানুষের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল ,ততক্ষণ কিন্তু ঘুড়িটি সারা আকাশে খেলে বেড়াচ্ছিল। আপাত দৃষ্টিতে সুতো দিয়ে বাধা মনে হচ্ছিল। আসলে ওই বাধাটা এবং লাটাই — এর মাধ্যমে পরিচালনা করাটাই ছিল ওই ঘুড়িটির এগিয়ে যাওয়ার শক্তি।

কিন্তু যখনই আমরা সুতটা কেটে দিলাম, ঘুড়িটির আর কোন লাগাম-ই কিন্তু থাকলো না ফলে তার পতন ঘটলো।

স্বাধীনতার উদাহরণ হল উড়ন্ত ঘুড়িটি আর স্বেচ্ছাচারিতা উদাহরণ হল সুতো কাটা ঘুড়িটি।

জীবনের ক্ষেত্রেও একথা সত্য । কখনো কখনো যা আমাদের আপাতদৃষ্টিতে নীচে নামাচ্ছে বলে মনে হয়, আসলে সেটিই কিন্তু আমাদের বাড়তে সাহায্য করছে অদৃশ্যভাবে।

এই ধরনের আরো আর্টিকেল পাবার জন্য এখানে ক্লিক করুন। পড়ুন এবং কমেন্টস্ করুন আরও কোন ধরনের আর্টিকেল আপনারা চান !!!

Leave a Comment